নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে চারতলা বিশিষ্ট সেই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে শক্তিশালী তিনটি বোমা উদ্ধার করেছে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। এছাড়াও বেশ কিছু চাপাতি ও বোমা তৈরীর সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। তবে এ সময় কাউকে পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুর দেড়টা থেকে উপজেলার বরপার আরিয়াব এলাকায় সৌদি প্রবাসী জাকির হোসেনের চারতলা বাড়িতে এ অভিযান চালানো হয়। এর আগে সকাল ১০টা থেকে বাড়িটি ঘেরাও করে রাখে এটিইউয়ের সদস্যরা। অভিযান শুরুর আগে ওই ভবনে অবস্থানরত বিভিন্ন ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের নিরাদ স্থানে সড়িয়ে নেয়া হয়। সেই সাথে ওই ভবনের পাশে থাকা বিভিন্ন ভবন ও বাড়িঘরের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
বাড়ির নিচতলার ভাড়াটিয়া শাহনেওয়াজ মিয়া বলেন, সকাল ১০ টার দিকে হঠাৎ করেই বাড়িটি পুলিশ ঘিরে ফেলে। পরে জানতে পারি বাড়িতে জঙ্গি সদস্য রয়েছে। তিনি জানান, প্রায় তিন মাস আগে ৪০-৪২ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি ভবনের তিনতলায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। ফ্ল্যাটে দুই ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীসহ তিনি থাকতেন। বিভিন্ন সময় আলাপে তারা জানিয়েছিলেন, নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায় ওই ব্যক্তি চাকরি করেন। গত তিন দিন ধরে ওই ফ্ল্যাটে তালাবদ্ধ রয়েছে।
অভিযানের নেতৃত্বে দেয়া এটিইউর পুলিশ সুপার (অপারেশনস) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভবনটির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে শক্তিশালী তিনটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ সময় ফ্ল্যাটে কাউকে পাওয়া যায়নি।
এরপর বিকেল ৩ টা ১৪ মিনিটে তৃতীয় তলার ওই ফ্ল্যাটের ভেতরে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। এ সময় ফ্ল্যাটের জানালার কাঁচ ভেঙ্গে নিচে পড়তে দেখা যায়। এতে চারদিকে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
পরে ৩ টা ৫২ মিনিটে ভবনটির পাশের একটি মাঠে দ্বিতীয়টি এবং ৪ টা ৩০ মিনিটে শেষ বোমাটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়।
অভিযান শেষে সানোয়ার হোসেন গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, নরসিংদী, নেত্রকোনা ও কক্সবাজার থেকে একাধিক জঙ্গি সদস্যকে আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী রূপগঞ্জ উপজেলার সৌদি প্রবাসী জাকিরের চারতলা ভবনটি ঘিরে রেখে অভিযান চালানো হয়।
বাড়ির প্রতিটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানো হয়। এসময় তিন তলার একটি ফ্ল্যাটের একটি কক্ষ থেকে তিনটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার হয়। এছাড়া, উদ্ধার করা হয় বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম। পরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বোমাগুলো নিস্ক্রিয় করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়াদের বিষয়ে জানতে পেরে হয়তো এই বাড়িতে থাকা জঙ্গি সদস্যরা পালিয়ে গেছে। তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এটিইউ পুলিশ সুপার বলেন, গত মাসের ৯ জুন নেত্রকোণা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ভাসাপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এক নারীকে গ্রেপ্তার করে এটিইউ। গত সোমবার কক্সবাজার থেকে একজন নারী জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের এই বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়।