নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭টি ওয়ার্ড এবং বন্দর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। এ আসনে এ পর্যন্ত তিনবার জিতেছে বিএনপি। এবার চতুর্থবারের মতো জিততে চায় তারা। তবে থেমে নেই জামায়াতে ইসলামী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। আসনটিতে এবার তারাও অভিষেক করতে চায়।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের ভোটার ও ভোটকেন্দ্রের নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে জেলা নির্বাচন অফিস। এই আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৭ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৫৩ জন এবং মহিলা ভোটার ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৬৫ জন। এখানে ৫ জন হিজড়া ভোটারও রয়েছেন।
অতীতে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন
সীমানা পরিবর্তনের আগে ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাসিম ওসমান, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি প্রার্থী হয়ে নাসিম ওসমান, ১৯৯১ সালে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, ১৯৯৬ সালে (ফেব্রুয়ারি) বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, ১৯৯৬ সালে (জুন) আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম আকরাম, ২০০১ সালে ফের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, ২০০৮-২০১৪ জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী নাসিম ওসমান, ২০১৪ উপর নির্বাচন থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এবার বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে মডেল গ্রুপের চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জামান মাসুদকে। নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি প্রতিদিন নিজ এলাকায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। নিয়মিত যুক্ত হচ্ছেন দলীয় ও সামাজিক কর্মকান্ডে।
তবে তার এ প্রার্থীতা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে অসন্তোষ দেয়া দিয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, বিগত ষোলটি বছর মাসুদ সাহেব বিএনপির কোন আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন না। তিনি মাঠে থাকবেন কি, তিনিতো বিএনপির সাথেই যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু এমন একজন ব্যক্তিকে দল মনোনয়ন দিলো, যাকে আমরা এখনও মেনে নিতে পারছি না। এটা আমাদের জন্য সত্যিই দুর্ভাগ্য।
বিএনপির নেতাকর্মীরা আরও বলছেন, এখন দল যেহেতু তাকে মনোনয়ন দিয়েই ফেলেছে এখন আর কি করার। তার দিকে না তাকিয়ে হলেও আমাদের ম্যাডাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের মুখের দিকে তাকিয়ে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করতে হবে।
এদিকে গত বছরের ৫ আগস্টের পর এ আসনটিতে সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি বাড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এ আসন থেকে দলটি মনোনয়ন দিয়েছে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদকে। তার পক্ষে প্রতিটি ইউনিটে দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। দলটি বেশিরভাগ মানবিক কর্মকা-ে এগিয়ে থাকতে চাচ্ছে।
দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, জনগণ পরিবর্তনের পক্ষে। আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসনের মাধ্যমেই আগামী দিনে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন সম্ভব। তাই জামায়াত ক্ষমতায় গেলে মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদের মত সৎ লোকের মাধ্যমেই জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করা হবে।
তবে বিএনপি ও জামায়াতসহ প্রায় সকল প্রার্থীর হৃদয়ে অনেকটা কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন। কারণ, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিরাট একটা এলাকা হলো বন্দর উপজেলা। আর তিনি ছিলেন, এ উপজেলারই চেয়ারম্যান। বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে গডফাদার শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের মত দুই প্রভাবশালী সাংসদের বিরুদ্ধে যেতে তিনি বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। এ থেকেই বুঝা যায় যে, বন্দরে তার রয়েছে বিরাট জনসমর্থন। এছাড়া তিনি বন্দর মুছাপুর ইউনিয়নের টানা তিনবারের চেয়ারম্যান ছিলেন।
বন্দরবাসী বলছেন, বন্দরে মাকসুদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তার প্রমাণ আমরা গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেই পেয়েছি। দুই প্রভাবশালী এমপির বাইরে গিয়ে আওয়ামী লীগের মত ক্ষমতাশীল একজন প্রার্থীকে হারিয়ে তিনি বিপুলভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। তবে তার এ ভোটযুদ্ধ কিন্তু শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ছিলো না, ছিলো বিএনপির বিরুদ্ধেও। কারণ, তার প্রতিদ্বন্দ্বি শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থীই ছিলো না, প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন মহানগর বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি আতাউর রহমান মুকুলও। কিন্তু বন্দরবাসী দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে তাকে বিপুলভোটে বিজয়ী করেছিলো। কিন্তু দুভার্গ্যবশত তিনি বেশিদিন চেয়ারম্যান থাকতে পারেন নি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর সকল উপজেলা চেয়ারম্যানের মত তাকেও অপসারন করা হয়।
তারা বলছেন, এবার তিনি জাতীয় নির্বাচন করবেন বলে শোনাযাচ্ছে। এটা সত্যিই অন্যান্য প্রার্থীদের কাছে অনেকটা আতঙ্কের মত। কারণ, যিনি সেই সময়ে রানিং ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারাতে পারেন, তাও আবার গডফাদারদের বিরুদ্ধে গিয়ে। সুতরাং তিনি এবারের নির্বাচনেও বিজয়ী হতে পারেন, এটা ভাবা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ, যে বন্দরবাসী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে গিয়ে অর্থ্যাৎ দলের ঊর্ধ্বে উঠে তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছিলো, সেই বন্দরবাসী হয়তো বন্দরের স্বার্থে এবারও তার পক্ষেই রায় দিবে।