এক সময় শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে বুকে হাজারো বিশাল বিশাল তোরণের দেখা মিলতো। কার থেকে কে বেশি বড় তোরণ বানাবে এই প্রতিযোগীতাই দেখা যেতো প্রতিটি পূজা মন্ডপে। শহরের আমলাপাড়া, উকিলপাড়া, ডিআইটি (নয়ামাটি), নিতাইগঞ্জ, ভগবানগঞ্জ ও দেওভোগ লক্ষ্মীনারায়ণ পূজামন্ডপ সহ বেশিরভাগ পূজামন্ডপেই দেখা মিলতো সেই বিশাল আকৃতির তোরণ। লাইন সজ্জায় বিস্তৃতসহ ওইসব তোরণগুলোতে থাকতো বিভিন্ন ধরনের কারুকাজ। যা পূজায় ঘুরতে আসা হাজার হাজার ভক্তদের দৃষ্টি কাড়তো। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, নারায়ণগঞ্জ থেকে সেই ঐতিহ্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন পূজামন্ডপগুলোতে ছোট খাটো তোরণের দেখা মিললেও সেই সুবিশাল তোরণ আজ হারিয়ে গেছে বললেই চলে।
এ বিষয়ে ভক্তদের সাথে কথা বললে তারা অনেকটা আক্ষেপের সাথে বলেন, এখন আর পূজায় তেমন মজা লাগে না। আগে পূজার প্রায় মাস খানের আগের থেকে শহরে বিশাল বিশাল তোরণ বানাতে দেখতাম। তোরণ দেখেই বুঝতে পারতাম, মা আসছে। তোরণের কারণেই আগে প্রায় মাসখানেক আগের থেকেই নারায়ণগঞ্জে একটা পূজা পূজা ভাব দেখা যেতো। এভাবে পূজার আমেজ পুরো মাসজুড়ে থাকতো এ নারায়ণগঞ্জে। কিন্তু সেই জিনিসটা এখন আর নাই। পূজামন্ডপগুলো তোরণ হয়, তবে সেটা আগের তুলনায় খুবই নগন্ন। আগেতো বিশাল তোরণের লাইটিংয়ের কারণে পুরো রাস্তা আলোকিত হয়ে উঠতো। তখন ভীষণ ভালো লাগতো। তাই আমরা চাই নারায়ণগঞ্জে পুনরায় সেই ঐতিহ্য চালু হোক।
এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, আমরা প্রায় গত চার ৫ বছর ধরেই দেখছি নারায়ণগঞ্জে দুর্গাপূজায় বিশালাকৃতির তোরণ বানানো হচ্ছে না। তবে ঠিক কারণে পূজামন্ডপগুলো বিশালাকৃতির তোরণ বানাচ্ছে না সেটাতো আমরা বলতে পারবো না। তবে শেষের দুটি দুর্গাপূজায় ঝড়ের কারণে উকিলাপাড়ার বিশালাকৃতির তোরণ ভেঙ্গে পড়ে। এরপর থেকেই শহরে আর কোন বিশালাকৃতির তোরণ আমাদের চোঁখে পড়েনি। তবে আমরা চাই, আবারও বিশালাকৃতির তোরণের আলোর ঝলকানিতে পুরো শহর ঝলমলে হয়ে উঠুক।
তবে এ বিষয়ে জেলা পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, আসলে প্রতি বছরই তোরণ হয়। তবে এ বছর সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনের কাজের জন্য বিশালাকৃতির সেই তোরণ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। আশাকরছি, আগামী বছর থেকে সেই বিশালাকৃতির তোরণ নগরবাসী দেখতে পাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, করোনার মহামারির সময় প্রথমত আমরা বিশালাকৃতির তোরণ নির্মাণ বন্ধ রাখি। এরপর উকিলপাড়ার তোরণ ঝড়ের কারণে একবার ভেঙ্গে পড়ে। এইসব কারণে পরবর্তি সময়ে তারা তোরণ নির্মাণ বন্ধ রাখে ঠিক বলবো না, তবে আগের মত বিশালাকৃতির না করে কিছুটা কমিয়ে তোরণ নির্মাণ করে।
শ্রী শ্রী বলদেব জিউর আখড়া ও মন্দিরের সভাপতি জয় কে রায় চৌধুরী বাপ্পি এ বিষয়ে বলেন, সত্যির অর্থে বলতে গেছে ফিনান্সিয়ালের কারণে এ তোরণ বানানো থেকে আয়োজকরা সরে এসেছে। কারণ, আগে আমরা তোরণ বানাতাম ৩ থেকে ৪ লাখ টাকায়। এখন সেটা পড়বে প্রায় ৮ লাখেরও উপরে। কিন্তু আমার পুরো পূজার বাজেটই হলো ৮ লাখ। এখন আমি কি পূজাটা ঠিকঠাকমত করবো নাকি, তোরণ করবো। সেই কারণেই তোরণ বানানোকে কমিটি এখন বোঝা মনে করে।
তিনি আরও বলেন, আসলে এখনতো আর আগের মত স্পন্সার পাওয়া যায় না। স্পন্সাররা এ তোরণ বানানো থেকে সরে এসেছে। আর কোন হিন্দু শিল্পপতিররাও এসে বলে না, তোরণের খরচটা আমি দেবো। তাহলে কিভাবে হবে? তাই এসব নানা কারণে দুর্গাপূজার তোরণের ঐহিত্যটা নারায়ণগঞ্জ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে।