ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, পাঁচ আগস্টের পরে যেমন রাজনীতি চেয়েছিলাম আমরা দেখেছি যে, সেটা কিছুই বাস্তবায়ন হয়নাই। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জাতিকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশটাকে নির্মাণ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম ৫ আগস্টের পরে জাতি আবার দুইভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে। একটি রাজনৈতিক শক্তি তারা পুরাতন রাজনৈতিক বন্দবস্ত চায়, তারা ৭২’র সংবিধান আলোকে সবকিছু চায়, তারা অতিতের মত নির্বাচন ব্যবস্থা চায়। তারা কোন সংস্কার চায় না। এবং তারা রাজনীতিতে কোন গুনগত পরিবর্তন চায় না। হ্যাঁ, একটা বিষয় আমরা সেই দলকে ধন্যবাদ জানাই দুর্নীতির দায়ে, চাঁদাবাজির দায়ে, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত হওয়ার দায়ে তাদের দলের ১০ হাজারের বেশি নেতাকর্মীদের বহিস্কার করেছে। এ জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই যে, তারা স্বীকার করে নিয়েছে সকল জায়গায় তাদের চাঁদাবাজ আছে, সন্ত্রাসী আছে। দশ হাজারের বেশি নেতাকর্মীদের বহিস্কার করে এটা তারা স্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু কয়লা ধুইলে কি ময়লা যায়? এ বহিস্কারের পরেও কি তারা সংশোধন হয়েছে? হয় নাই। আসলে আমরা যেটা দেখতে পারছি, তাদের দলের উপরে তাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নাই।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মহানগর শাখার গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন, প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রসংস্কার ও খুনিদের দৃশ্যমান বিচার দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গাজী আতাউর রহমান আরও বলেন, যে দল নিজের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না সেই দল দেশটাকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে? আমরা সঙ্কিত, আমরা ভেবেছিলাম তাদের পরিবর্তন হয়েছে, তাদের সবার চরিত্রের পরিবর্তন হয়েছে, তাদের রাজনৈতিক কালচারের পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হলো, অতীত থেকে তারা কোন শিক্ষাই নেয় নাই। তাদের মধ্যে কোন পরিবর্তন হয় নাই।
‘আমরা চাই না আওয়ামী লীগের মত অন্যকারো এমন পরিনতি হোক’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদি শক্তি শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের যেভাবে আঘাত করতো তারা ঠিক সেই ভাষাই আঘাত করছে। তারা আমাদেরকে বলে মৌলবাদি, রাজাকার। আমাদেরকে নাকি পাকিস্তান-আফগানিস্তান পাঠিয়ে দেবে। এ কথাতো শেখ হাসিনা বলতো। বাংলাদেশে ইসলামপন্থিরা অতিতে যতই নির্যাতনের শিকার হয়েছে কেউ কি আফগানিস্তান-পাকিস্তান পালিয়েছে? বরং যাদেরকে আমরা ভারতের দালাল বলতাম তারা ভারতে পালিয়ে গিয়ে প্রমাণ করেছে তারা সত্যিকার অর্থেই ছিলো ভারতের দালাল। এখন যারা আমাদেরকে আফগানিস্তান-পাকিস্তান পাঠিয়ে দিতে চায়, আমরা যাবো না। আমরা এ দেশকে ভালোবাসি। আমরা কেন যাবো? কিন্তু তাদের বিভিন্ন দেশে বাড়ীঘর আছে। আওয়ামী লীগ যেমন এ দেশের ছাত্র-জনতার ধাওয়া খেয়ে ভারতে পালিয়েছে, আমরা চাই না অন্যকারো এমন পরিনতি হোক। আমরা চাই, সবাই অতিত থেকে শিক্ষা নিক, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশটাকে গড়ে তুলি। কিন্তু তারা শিক্ষা নিতে চায় না। এ জন্য আমাদের দুঃখ হয়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মহানগর শাখার সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ্র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সুলতান মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, দলটির কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটি সম্পাদক আলহাজ¦ মুহাম্মদ হারুনুর রশীদ, মুফতি হাবিবুল্লাহ্ হাবিব, মুফতি সিরাজুল আলমাদানি প্রমূখ।