নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের একটি থানা ও সোনারগাঁও উপজেলা মিলে গঠিত নারায়ণগঞ্জ–-৩ আসনটি দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক গুরুত্ব ও কৌশলগত হিসাব-নিকাশের কেন্দ্রবিন্দু। এ এলাকায় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিএনপির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে বিশেষজ্ঞরা দেখছেন সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার অংশ হিসেবে।
বিশ্লেষকদের মতে, সিটি করপোরেশন এলাকায় ইতিমধ্যেই একজন জনপ্রতিনিধি মেয়র সম্পূর্ণ প্রশাসনিক ক্ষমতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। এই একই অঞ্চলে যদি আরেকজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি, অর্থাৎ এমপি, উঠে আসেন, তাহলে একই এলাকায় দ্বৈত ক্ষমতা কাঠামো তৈরি হতে পারে। এতে রাজনৈতিক স্বার্থের সংঘাত, উন্নয়নধারার কাজে টানাপোড়েন এবং প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
অন্যদিকে, যদি সিটি এলাকা থেকেই এমপি নির্বাচন করা হতো, তাহলে সোনারগাঁও উপজেলার বিস্তীর্ণ জনগোষ্ঠী উন্নয়ন ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হতে পারত। কারণ সিটি এলাকার দৃশ্যমান উন্নয়ন ও বেশি মিডিয়া মনোযোগের কারণে এমপির কার্যক্রম সেখানেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে সিটির ক্ষেত্রে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলক কম। কারণ মেয়রকে তারা সবসময় অভিভাবক হিসেবে পান। ফলে সিটি করপোরেশনের ভোটাররা প্রশাসনিকভাবে উপেক্ষিত হন না। এই বাস্তবতা বিবেচনায় বিএনপি সোনারগাঁও উপজেলা থেকে প্রার্থী মনোনয়নকে নিরাপদ ও ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে নিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, যেসব যোগ্য ও ত্যাগী নেতারা মনোনয়ন পাননি তাদের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মত, দল তাদের সরাসরি হারিয়ে ফেলতে চায় না। বরং ভবিষ্যতে সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে এদের মতো অভিজ্ঞ, ত্যাগী নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রাখার পরিকল্পনা থাকতে পারে বিএনপির। এমনকি এই পদগুলো দলীয় সংগঠন শক্তিশালী করতে এবং স্থানীয় নেতৃত্বে ভারসাম্য রাখতে সবচেয়ে উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করতে পারে।
তবে কিছু বঞ্চিত নেতার ক্ষোভপ্রকাশ বা দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকে বিশেষজ্ঞরা দেখছেন আত্মঘাতী পদক্ষেপ হিসেবে। তারা বলছেন, মনোনয়ন না পেয়ে দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে কোনো অবস্থান নেওয়া মানে নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতকেই ঝুঁকির মুখে ফেলা। দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নেওয়া শুধু জনপ্রিয়তা কমায় না, বরং ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় পদগুলোর দরজাও বন্ধ করে দিতে পারে।
সব মিলিয়ে রাজনৈতিক ভারসাম্য, সিটি ও উপজেলা দুই অংশের ভোটারদের স্বার্থ রক্ষা এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো শক্তিশালী করার কৌশল, এই তিন দিক বিবেচনায় বিএনপির বর্তমান সিদ্ধান্তকে অনেকেই যথেষ্ট বাস্তবসম্মত, হিসাবি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মনে করছেন।