৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালিতে মুখরিত হয়ে উঠে গোটা শহর। মহানগর বিএনপিসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের শহরে একের পর এক র্যালি বের করতে দেখা যায়।
শুক্রবার (০৭ নভেম্বর) বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এসব র্যালি। এসব র্যালিতে থাকা হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কারণে শহর অনেকটা অচল হয়ে পড়ে। ফলে শহরে তীব্র যানজট বাধতেও দেখা যায়। তবে বন্ধের দিন থাকায় খুব বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি নগরবাসীকে।
এদিন শহরের চাষাঢ়াস্থ মিশনপাড়া থেকে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বে বের করা হয় এক বিশাল র্যালি। র্যালিকে কেন্দ্র করে দুপুর থেকেই মহানগর বিএনপির আওতাধীন সকল থানা ও ইউনিয়নসহ প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মিশনপাড়া এলাকায় জড়ো হতে থাকে। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে মাত্র অল্পকিছুক্ষনের মধ্যেই সেই এলাকা লোকে-লোকারণ্য হয়ে উঠে।
এরই মাঝে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদের পক্ষের একটি র্যালি মহানগর বিএনপির র্যালিপূর্ব সমাবেশ ভেদ করে বেড়িয়ে যেতে লাগলে কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এসময় মাসুদের অনুসারীরা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে দেখে ‘আমরা সবাই জিয়ার সেনা, ভয় করিনা বুলেট বোমা’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। মাসুদের অনুসারীরা যেন মহানগর বিএনপি নেতাদের পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া বাধার চেষ্টা করে। কিন্তু মহানগর বিএনপি নেতাকর্মীরা অত্যান্ত ধৈর্য ধারণ করায় সেটা আর সম্ভব হয়নি। মাসুদের অনুসারীরা মিছিল নিয়ে যাওয়ার শেষে সেখান থেকে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃতে বের করা হয় বিশাল বর্ণাঢ্য র্যালি।
র্যালিটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মন্ডলপাড়া এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এর আগে র্যালিতে থাকা হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে গোটা নগরী।
এর আগে র্যালিপূর্ব এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আপনারা জানেন ৪ পাঁচ দিন আগে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে নারায়ণগঞ্জের ৪টি আসনে মনোনয়নের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এ তালিকা চূড়ান্ত তালিকা নয়। এ তালিকা যেসময় চূড়ান্ত হবে সেই সময়ে এ নারায়ণগঞ্জের ৫ আসনে ধানের শীষের নমিনেশন দেয়া হবে। সেই সময় আমরা ধানের শীষের পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়বো। কোন বিভেদ আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু আজকে চূড়ান্ত নমিনেশন বলে প্রচার করছে, তাদের বলে দিতে চাই যেই সময়ে ঘোষণা হয়ে সেই সময়েই বলে দিয়েছে, ‘এটা চূড়ান্ত তালিকা নয়।’ সুতরাং এ সভা থেকে আজকে আমি নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সকল স্তরের নেতৃবৃন্দকে আডিম বলে দিতে চাই, আমরা দলের পক্ষে আছি, ধানের শীষের পক্ষে আছি। আমরা সব সময় আগামী নির্বাচনে আমরা আমাদের বুকের রক্ত দিয়ে হলেও ধানের শীষকে বিজয়ী করবো।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, যারা জাতীয় নির্বাচনকে বানচাল করতে চান সেই সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই জনগণের অধিকার, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা হবে। যেদিন আমার নেতা আমার অভিভাবক তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবে, সেদিন এদেশের মানুষ ভোটের অধিকার, মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতার চেতনা পুরোপরি উজ্জীবিত হবে।
র্যালিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রং বেরংয়ের ব্যানার ফ্যাস্টুন, প্লাকার্ড, শত শত দলীয় ও জাতীয় পতাকাশোভাপায়। এছাড়া ডাক-ঢোল, ঘোড়ার গাড়ী ও ডিজে সাউন্ড সিস্টেম র্যালিকে করে তোলে আরও বর্ণিল।
র্যালিতে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসেন খান, ফতেহ্ মোহাম্মদ রেজা রিপন, সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক আহমেদ, ডা. মজিবুর রহমান, মাসুদ রানা, অ্যাডভোকেট এইচ এম আনোয়ার প্রধান, বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ, সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ লিটন, বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি শাহেনশাহ্ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক রানা, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হক, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাখাওয়াত ইসলাম রানা, সদস্য সচিব মমিনুর রহমান বাবু, মহানগর মহিলা দলের সভাপতি দিলারা মাসুদ ময়নাসহ আরও অনেক নেতাকর্মী।
এদিকে একই সময় শহরে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট আবুল কালামও একটি র্যালি বের করে। র্যালিটি শহরের কালীরবাজারস্থ কালামের বাসভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহরের বেশ কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় তার বাসার সামনে গিয়ে শেষ হয়। অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ছাড়াও তার পুত্র মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আবুল কাউসার আশাও র্যালিটির নেতৃত্বে ছিলেন। র্যালিতে মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।