নারায়ণগঞ্জের মোট ৫টি আসনের মধ্যে সবচাইতে বড় ফ্যাক্টর ফতুল্লা-৪ ও সদর বন্দরের ৫ আসন। একসময়ের বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত এ দুটি আসনে গত সাড়ে ১৫ বছরের চিত্র ছিল ভিন্ন। ভোটারবিহীন একের পর এক নির্বাচনে পুরোনো ভোটাররা বিমুখ হয়ে পড়েন নির্বাচন নিয়ে। নতুন ভোটাররা কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি দীর্ঘ সময়। তবে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই জনগণের মাঝে ফিরেছে চাঞ্চল্য।
পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে মুখিয়ে আছেন এ দুটি আসনের প্রায় কয়েক লক্ষ ভোটার। পুরোনো দুর্গ নতুন করে ফিরে পাবে বিএনপি-এমন প্রত্যাশা প্রার্থীদের। আর প্রচারে যুক্ত জামায়াত প্রার্থীরা বলছেন, জনগণের সাড়া দেখে তারা উচ্ছ্বসিত। অন্তত এ দুটি আসনে জয় পাওয়ার ব্যাপারে জামায়াত নেতারা আশাবাদী। এবার প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ভোটের সমীকরণ মেলাতে নির্বাচনের দিনক্ষণ গুনছেন লাখো ভোটার।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সদরের একাংশ)
এ আসনে নির্বাচন সামনে রেখে জমে উঠেছে রাজনৈতিক মাঠ। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীদের মাঠে বেশ সরব থাকতে দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের নির্বাচন অংশগ্রহণ এক প্রকার অনিশ্চিত। তাদের ভোট ব্যাংক নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে নতুন চমকের আলোচনা।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন, সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিব ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি শিল্পপতি মো: শাহআলম।
তবে বিএনপির ভেতরে সবচেয়ে বড় উত্তাপ এখন মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদের অনুসারীদের মধ্যে। নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যও চলছে মাঠে ময়দানে। তবে তারা দ্বন্দ্বের মধ্যে থেকেও সাংগঠনিক মাঠের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পুরোদমে। দীর্ঘদিনের রাজনীতিতে তৃণমূলের শক্ত নেতা অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। অপরদিকে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য। সেক্ষেত্রে তৃণমূলে তারও গ্রহণযোগ্যতা কম নয়।
অপরদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী মহানগর জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুল জব্বার পুরোদমে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বলে জানাগেছে। তিনি এই আসনের ফতুল্লা থানার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সাধারন মানুষের দু:খ দুর্দশার খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং সমাধানের চেষ্টা করছেন। এছাড়া বড় সমস্যাগুলি সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন। যার ফলে এলাকার ভোটারদের মাঝে তিনি এরই মাঝে অনেকটা সারা ফেলে দিয়েছেন। তাকে নিয়ে মানুষ ভাবতে শুরু করেছে। যেমন এবারের বর্ষায় তিনি ফতুল্লায় জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত এলাকাগুলিতে গিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী ভাবে করনীয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করছেন এবং তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এরই মাঝে তিনি নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে ফতুল্লার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন। তিনি ফতুল্লার জনগনকে এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে জামায়াতে ইসলামী যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে আর তিনি যদি এমপি হন তাহলে ফতুল্লায় কোনো জলাবদ্ধতা থাকবে না। এছাড়া তিনি ফতুল্লা প্রত্যেকটি অলিগলি, পাড়া মহল্লা ঘুরে ঘুরে দেখছেন এবং রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ড্রেনেজ ব্যবস্থা সহ সর্বত্র ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। যার ফলে ফতুল্লার মানুষও তাকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৫ (সিটি কর্পোরেশন এড়িয়া)
শহরের কাছে এবং শিল্প কারখানায় সমৃদ্ধ হওয়ায় আসনটিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দলীয় কোন্দল লেগেই থাকে প্রতিটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মধ্যে। বৃহত্তর দল বিএনপিও এর বাইরে নয়। বিশেষ করে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এ দলের কোন্দল-গ্রুপিং অনেকটা প্রকাশ্যে এসেছে। তবে এ আসনে শুধু বিএনপিরই ৫ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন ভোটের মাঠে। তারা ইতোমধ্যেই মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন বলে জানাগেছে।
এই আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন সাবেক তিন বারের সাংসদ সরওয়ার অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। ৫ আগস্টের পূর্ব মাঠে-ময়দানে এইসব গ্রুপের বিরোধ পরিলক্ষিত না হলেও হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায় মুখোমুখি অবস্থা দেখা যায় এই দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের। শুধু তাই নয়, গ্রুপিয়ে কারণে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া এ আসন থেকে আরও দুইজন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে, তারা হলেন, শিল্পপতি মো: মাসুদুজ্জামান ওরফে মডেল মাসুদ ও শিল্পপতি আবু জাফর আহমেদ বাবুল ওরফে প্রাইম বাবুল। বর্তমানে তাদের নিয়েও মহানগর বিএনপির নেতারা দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। তাই বর্তমানে সাধারণ জনগণের মাঝে এই আসনের মনোনয়ন প্রার্থী নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কে হবেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপির পতাকাবাহী সিপাহি! এই প্রশ্নে প্রবীণ বিএনপি সমর্থকরা অভিজ্ঞ অ্যাডভোকেট আবুল কামালকে এগিয়ে রাখলেও তরুণদের বৃহৎ একটি অংশের মাঝে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুদের রয়েছে বেশ জনপ্রিয়তা।
এদিকে বিএনপি সিনিয়র নেতাদের নির্বাচনের টিকেটের লড়াইয়ে গ্রুপিং প্রকাশ্য হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে চায় জামায়াতে ইসলামী। নিজেদের সাংগঠনিক কাজ বৃদ্ধি, জামায়াতে ইসলামী নিজস্ব ইমেজ ও সামাজিক কাজের মাধ্যমে ভোট ব্যাংক ক্যাশ করতে চায় তারা।
জানাগেছে, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে জামায়াত নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন জনসেবামূলক কর্মকান্ড করে যাচ্ছে। এছাড়া এ আসনে জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিএনপি প্রার্থী কোন্দলে জামায়াতের একক প্রাথী দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহামদ। তিনি পূর্বে জেলা ও মহানগর জামায়াতের আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে তিনি বহুবার কারানির্যাতিত হয়েছেন। এছাড়া তাকে ঘায়েল করতে তার বিরুদ্ধে বিগত সময়ে একাধীক মামলাও দেয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার কোনভাবেই তাকে টলাতে পারেনি। তিনি জামায়াতে সাথে আছেন আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন বলে জানাগেছে।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী মনোনিত হওয়ার পর থেকেই মূলত মাঠে ময়দানে ঘুরে বেড়াচ্ছে মঈনুদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রায় প্রতিদিন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে গণসংযোগ করছেন এবং তাদের কাছে সৎ যোগ্য লোককে নির্বাচিত করার আহ্বান জানাচ্ছে। এতে করে তার ওপর আস্থা রাখতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ।